Pages

Thursday, August 30, 2018

Euphoria? Indulgence? Stupidity?

Today I had the opportunity to visit my school again for some work and it turned out to be whimsical experience. Well, emotionally, at least.
The moment I set foot in the school, I was overwhelmed with feelings I cannot put into words. It was like being extremely joyful and sad at the same time. Joyful because there I was, once again, back at the place that made me. Among hundreds of kids some of who will maybe someday turn out to be like me. I was safe. I was home. Sad, because I would never truly be back there, my time there had ended. I will never be I child again, I will never be able to play in that uniform again.
A lot of questions sprang up in my mind
'Is this real?'
'When did I grow up?'
'When did I get used to not coming here everyday?'
'Why am a not here anymore, why am I not in that uniform like those hundreds of kids, playing carelessly?Why am I not one those kids?'
'Were the fields, the tables always this small?'
'When did I become so okay with growing up?'
'Will these kids someday feel what I'm feeling? Do they do the same stuff we did in school?'
'When will I come back here?'
'What would it take for another 10 years of school?'
'Is this a dream? will I wake up?'.....

This was such a strange experience. Melancholic euphoria. Or just rewarding indulgence? Or just sheer stupidity? I was there, I was home, I was elated and I was sad. But this stupid grin was smeared across my face. It was utter bliss. I was stumped. I was overwhelmed.
Life I tell you.....

Friday, August 17, 2018

উঠান আর মানিব্যাগ


মানিব্যাগ ব্যবহার করা শুরু করেছিলাম অনেক পরেবিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিকে। জীবনে প্রথম অন্য শহরেবাসার বাইরে থেকে পড়ালেখানিজেকে নিজেই গুছিয়ে রাখতে হবে বলে কথা। এর পরে আরেকটা মানিব্যাগ কিনেছিলাম পঞ্চম বছরেযেটা কিনতে অনেক দিন ধরে আমাকে ভাবতে হয়েছেআসলেই নতুন কোন মানিব্যাগ লাগবে কিনা। জীবনের প্রথম মানিব্যাগটাকে ছেড়ে দিতে সময় লেগেছিল কয়েক সপ্তাহ, অনেকদিন নিজের সাথে বিতর্ক করে শেষমেশ একটা নতুন মানিব্যাগ কিনেছিলাম।


এইটা আমার একটা অদ্ভুত সমস্যা। জড়অসাড়প্রাণহীন (কিছু ক্ষেত্রে বিমূর্ত) কিছু বস্তুর প্রতি এই অহেতুক টান। এখানে পরিষ্কার করা দরকারহোর্ডিং নামক ডিস অর্ডার টা আমার নাই। আমার অবস্থাটা একটু বিচিত্র বলতে হয়। হঠাত হঠাত কিছু জিনিসের প্রতি এক অহেতুকপ্রচন্ড টান অনুভব করি। অনেকটা নস্টালজিয়ার মত। হঠাত একটা গান শুনেএকটা কিছু খেয়েএকটা গন্ধ নাকে এসে লাগার সাথে সাথে একটা ধাক্কাতারপর পৌছে যাবেন আপনার শৈশোব কিংবা যৌবনে। মুহূর্তের মধ্যে মনের পর্দায় ভেসে উঠবে একগাদা স্মৃতিঅনুভূতি। তারপরএর চেয়েও দ্রুত চোখের পলকেই উধাও হয়ে যাবে! এবং পুরো ব্যাপারটা একজনকে নিস্তব্ধঅকেজো করে রেখে যাবেকয়েক মিনিট থেকে শুরু করে অবস্থাভেদে কয়েক দিনের জন্য! সব না হলেও অধিকাংশ মানুষ এই বিস্ময়কর যাত্রাটার মধ্যে দিয়ে গেছেন।


আগে শুধু মানুষের মুখেই শুনে আসছিলাম নস্টালজিয়া শব্দটাআমার সাথে নস্টালজিয়ার পরিচয় শুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বছর থেকেএর সম্পূর্ণ তেজ অনুভব করি তৃতীয় বছরে। সে এক আলাদা কাহিনীতবে আমি কয়েক মাসের জন্য কেমন অকেজো হয়ে গেছিলাম। নস্টালজিয়ার সামনে আমি এমনিতেই দুর্বল। নস্টালজিয়া গ্রীক দুইটি শব্দের মিশ্রণ, যার অর্থ দাঁড়ায় ঘরে ফিরবার আকুলতা। শুধু আক্ষরিক অর্থে ঘরই নয়, বরং বিগত সময়গুলোকে ফিরে পাবার আকাঙ্খা। প্রিয় স্মৃতিগুলোর সাথে বাস্তবতার অমিল হলেই অসহায় লাগে। একবার ছুটিতে বাসায় এসে দেখলাম নানীবাড়ির নিম গাছটা কেটে ফেলা হয়েছেবুকে ধক করে লাগল। আরেকবার বাসায় এসে যখন দেখলাম আমার রুমের ফার্নিচার গুলা সরিয়ে নতুনভাবে সাজানো হয়েছেআম্মুর ওপর অনেক রাগ হয়েছিলনিজে নিজেই কয়েকদিন পর আবার আমার রুম আগের মত করে ফেলেছিলাম। যখন এসে দেখলাম পাড়ার পুরানো রাস্তাটা বড় করার জন্য দুপাশের পুরানো বিল্ডিংগুলা ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছেযেগুলা দেখে দেখেযেগুলার খোলা বারান্দায় কুমির-ডাঙ্গা খেলে আর ঘুড়ির সুতায় মাঞ্জা দিয়ে কেটেছিল ছেলেবেলাঅনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। বেশ কয়েকদিন ওই রাস্তা ধরে হাটতে পারিনি। একই ঘটনা ঘটল যখন পাব্লিক লাইব্রেরীর পুরানো বিল্ডিংটাও ভেঙ্গে ফেলা হল। প্রায় এক মাসের মত ওই রাস্তাটা এড়িয়ে গেছি। একসময় মেনে নিতে হয়েছে।
 

কেন এই রকম আচমকা দু একটা তুচ্ছ বস্তুর প্রতি এই আশ্চর্য টানকেন পরিচিত বস্তুর আচমকা পরিবর্তনে এরকম অসহায় লাগেএই ঘটনাটা মোটেই আহ্লাদি নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে আরো একটি গভীর ও জটীল বিষয়। তা হল আমাদের পরিচয় (identity) চারপাশে আমরা যা দেখে আসিযা কিছুর সাথে আমাদের দৈনন্দিন মিথস্ক্রিয়া বা যোগাযোগ করিযা কিছু আমাদের মন কে উস্কে দেয়আমাদের ভাবতে শেখায়সবই আমাদের পরিচয়ের অংশ। ছোটবেলার খেলার পুতুল থেকে শুরু করে পছন্দের খাবারপ্রিয় কোম্পানীর রংপেন্সিলবাসার এক জরাজীর্ণ দেয়ালখসে পড়া ইট সুড়কি সবকিছুকেই আমরা আমাদের পরিচয়ের সাথে জুড়ে ফেলি। পরিচয় বা identity খুবই জটিল একটা বিষয়। আমাদের অজান্তেই কখন কীভাবে গড়ে উঠবে বলা মুশকিল। আপাত অপ্রয়োজনীয় বা তুচ্ছ এই ব্যাপার গুলা কেন আমাদের পরিচয়ের অংশ হয়ে ওঠে সেটাও বেশ মজার। আসলে আমরা মানুষ হিসেবে পরিবর্তনের শেকলে বাঁধা। প্রতিদিন আমাদের শরীরের অনু-পরমানু গুলা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। একজন মানুষের শরীরের প্রতিটা অনু-পরমানু প্রতিস্থাপিত হতে মোটামুটি সাত বছর সময় লাগে। অর্থাৎ টেকনিক্যালিসাত বছর পর আপনি সম্পুর্ন নতুন আরেকজন। এ তো গেল শরীরের ভেতরের ব্যাপার। বাইরেও চলে এই পরিবর্তনেরভাঙ্গা-গড়ার খেলা। আমরা বড় হচ্ছিশৈশব-কৈশর-যৌবন-প্রাপ্তবয়স্ক-বৃদ্ধপ্রতি ধাপে পরিবর্তিত হচ্ছে আমাদের ধ্যান-ধারনাজ্ঞান-গরিমাদৃষ্টিভঙ্গি ও চারপাশ। পরিবার-বন্ধু হারাচ্ছিনতুন সঙ্গ খুজে নিচ্ছি। গ্রাম শহর হচ্ছেমেঠো পথ রাস্তা হচ্ছেপাড়ার ঘুড়ি-লাটাই-লাটিমের দোকানের যায়গায় হচ্ছে শো-রুম। পরিবর্তন আমাদের তুচ্ছ অনুভুতিগুলোর তোয়াক্কা করে না। এই ব্যাপারটাকে অনেকটা প্রশমিত করে নস্টালজিয়া। আমরা যে সমস্ত জিনিসের সাথে আমাদের পরিচয়টা কে জুড়ে রেখেছিএই জন্যই সেই জিনিসগুলোর প্রতি আমাদের এত টান। প্রযুক্তির এই যুগেআমাদের অনুভুতিগুলাকে অনেকটা নেগেটীভভাবে দেখা হচ্ছেদুর্বলতা বলে ধরা হচ্ছেএবং এই অনুভুতিগুলার জন্য সমাজ আমাদের রীতিমত অপরাধী হিসেবে প্রতীয়মান করছে। আর সেই জন্যই এই অহেতুক বস্তুগুলোর প্রতি আমাদের এত টান। এগুলাই আমাদের পরিচয়ের শেষ অংশ। এগুলা কেড়ে নিলে আমাদের যে অস্তিত্বই থাকে না!
Lifetime Retrieval Curve নামে একটা গ্রাফ আছেযেটাতে দেখা যায় সাধারনত ১৫-৩০ বছর বয়সে যে স্মৃতি গুলা আমাদের তৈরী হয়েছেসেগুলার জন্য আমরা বেশি নস্টালজিক। গ্রাফের এই জায়গাটাকে বলা হয় Reminiscence Bump  আসলে এই ১৫-৩০ বছরের সময়টাতেই আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয় গুলা গড়ে ওঠে। শুধু তাই ই নাজীবনের গুরুত্বপূর্ন সময়গুলাতে যেমন বয়ঃসন্ধিনতুন শহরে যাওয়াবা সঙ্কটের মুহুর্তগুলাতে নস্টালজিয়া প্রকটভাবে দেখা দেয়। খেয়াল করলে দেখা যাবে এই সময়গুলাতে হঠাত করে আমরা অনেকগুলা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বছরের ওই সময়টাতেও একটা বিশাল মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। একদিন হঠাত অনুধাবন করলাম, আমার হয়ত নিজের শহরে আর ফিরে আসা হবে না কোনদিন, যেন আমি চিরতরে সব ইতিমধ্যেই ফেলে এসেছি। সঙ্কট, অনিশ্চয়তা, ও বাস্তবতার এই সন্ধিক্ষনেই টের পেয়েছিলাম নস্টালজিয়ার শক্তি। পরিবর্তনের একধরনের প্রতিক্রিয়া হল নস্টালজিয়া। একধরনের সামাল দেবার প্রক্রিয়া অর্থাৎ Coping Mechanism

আমরা বড় হয়েছি আমার নানিবাড়িতেউঠান আলানিম গাছ আলামায়াময়পুরানো একতালা একটা বাড়ি। এই উঠানে ছোটাছুটি করেমাটি খুড়েনিমগাছে টাঙ্গানো দোলনায় চড়েপেয়ারা গাছে উঠেভাড়া দেয়া রূপম প্রেস এর সীসার হরফ চুরি করে আমাদের বড় হওয়া। এ ধরনের খুবই পরিপুর্ন শৈশব পাওয়ার একটা খারাপ দিক হল নস্টালজিক হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে আমার অস্তিত্বই যেন নানিবাড়িকে ঘিরে। নানিবাড়ির যে কোন পরিবর্তনেই বিচলিত হই। নানু চলে যাওয়ার এক বছর হয়ে গেল। আমার আম্মু-খালা-মামারা নানিবাড়ির যায়গাটাতে এপার্টমেন্ট বানাবে। প্রথম প্রথম শুনে বিশ্বাস করতে পারিনি। নুন ধরা দেয়াল আর উঁই ধরা দরজা জানালা গুলা নাকি আর থাকবে না। তা কি করে হয়আমার কাছে ওইটাই সত্য। ওইটাই চিরন্তন। স্থাপত্যে পরার কারনে আমাকে প্রথমে প্ল্যান করতে বলা হয়েছিল। আমি না করেছি। ওই যায়গায় হাত দেয়ার স্পর্ধা আমার নাইওই মায়াময় উঠান নষ্ট করার বুকের পাটাও আমার নাই। আরও শুনছি আমার শিক্ষিত মা-খালা-মামারা নাকি সেটব্যাক না মেনেই অনেকগুলা ঘিঞ্জি ইউনিটের এপার্টমেন্ট বানাবে। যেদিন শুনেছিলাম রাতে ঘুমাতে পারিনি।

প্রতিদিন নানিবাড়িতে যাওয়া তো হয় নাতবে বিশ্বাস করুন যতদিন আমি জানছি উঠানটা আছেযতদিন জানালা দিয়েই তাকালেই দেখতে পাই উঠানে এক চিলতে রোদরোদে শুকাতে দেয়া আচারের বোয়ামলেজ এলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকা অলস বিড়ালঅথবা বৃষ্টিভেজা বেদীর ফুলগাছগুলাততদিন মনে হবে আমি নিরাপদ আছেজগতের কোন শক্তি আমাকে হারাতে পারবে না। বিশ্বাস করুনআমার পরিচয় যে ওই উঠানের সাথে গেঁথে দেওয়া! 

একটা উঠানের জন্যএকটা জরাজীর্ন বিল্ডিং এর জন্য এতকিছু অনুভব করতে কে শেখাল জানি না। হয়ত জীবনের এই পর্যায়ে একটা বড়সড় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি বলে এই জরাজীর্ন স্মৃতি আর খসে পড়া ইট সুড়কীর প্রতি এত ভালবাসা। হয়ত এত বছর নিজের শহর, নিজের ঘর থেকে দূরে থাকার কারনে এই অহেতুক অনুরক্তিগুলো তৈরী হয়েছে। হয়ত কিছুদিন পর এই অনুভুতিগুলোও মিলিয়ে যাবে। তবে যেদিন থেকে নতুন এপার্টমেন্ট এর কাজ শুরু হবেআমার ভেতরের একটা অংশ চিরতরে মরে যাবে। নিজেকে নিয়ে আর কোনদিন এত গর্ব করতে পারব নাএত দৃঢ় থাকতে পারব না। পরিবর্তন কে কে ই বা আর আটকাতে পারবে। বাসা না বানিয়ে আমার মা-খালা-মামারাই বা কই যাবেপরিবর্তন তো হতেই হবেনতুনকে আসতেই হবে। উঠানের যায়গায় থাকবে চকচকে এপার্টমেন্ট। কিন্তু আমি মেনে নিতে পারব না। কোনদিন না।











----------------------------------------------------
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ঃ 
রাত ১ টা বাজে। উঠানসমেত নানীবাড়ি আর দু' তিন মাস আছে খুব জোড়। যে কয়টা দিন আছে যত পারা যায় ছবি তুলে রাখছি। একটা প্ল্যান আর থ্রিডি মডেল ও করে রাখার ইচ্ছা আছে। তোলা ছবিগুলোর কয়েকটা ঘষামাজা করছিলাম আপলোড দিব বলে (ইয়ারফোনে বাজছিল হ্যামকের গান, কেন জানি মনে হল এটা লিখে রাখা উচিৎ)। ঠিক এই সময় হঠাৎ একটা ধাক্কা কোথা থেকে খেয়ে বসলাম। অনেকদিন ধরেই নিজেকে বলে আসছি, এটাই হবার, একদিন নানীবাড়ি ভাঙ্গা হবে, এটাই নিয়ম, এটাই সত্যি। তারপরও এইসব হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে, ছবি গুলার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঠিক কী একটা হল বুঝলাম না।

বাচ্চাদের মত কেঁদেছি বসে বসে বেশ কিছুক্ষন।
বাচ্চারা যেমন বাস্তবতা, যুক্তি না মেনে কাঁদে, ওইরকম।
জীর্ণ বাড়িটা এক টুকরা বাচ্চামি এইভাবে ফিরিয়ে দিবে জানা ছিল না।
এক্টুও প্রস্তুত ছিলাম না।
কখনো হতে পারবো কিনা তাও জানিনা...







----------------------------------------------------
২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২ঃ
মামা-মামীরা আজ চলে গেল নানীবাড়ি ছেড়ে। ডেভেলপার দিয়ে ওখানে বিদঘুটে এপার্টমেন্ট বানানো হবে কয়েকমাসের মধ্যে। আমার রুম থেকে নানীবাড়ির রান্নাঘরের আলো দেখা যেত। এখন থেকে জানালা দিয়ে তাকালেই ঘোর অন্ধকার দেখতে পাব। নিঃশব্দ। মৃত।  

Saturday, August 04, 2018

তারুণ্যের জন্য

গত কয়দিন ধরে দেশের কিশোর-তরুণেরা যা দেখালো, তা এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। অকর্মণ্য প্রবীণ, জ্ঞানপাপী সুশীল ও ভীতু মধ্যবিত্তদের নিষ্ক্রিয়তা (কিছু ক্ষেত্রে উস্কানি) ও ব্যর্থতায় বহু বছর ধরে জমতে থাকা কলঙ্ক মুছতে রাস্তায় নেমে এসেছে সংখ্যাতীত স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী। নিজ হাতে তিলে তিলে ঠিক করছে ট্রাফিকের অনিয়ম, পুলিশের দূর্নীতি আর আমাদের কমনসেন্স। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী! চিন্তা করা যায়!
এক ধরনের নষ্ট রাজনীতিতে জর্জরিত বাংলাদেশ অনেক বছর ধরেই। চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা প্রচুর অনিয়ম, অপরাধ এবং অপরাধীদের বিনা বিচারে ছাড় পেয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে আমাদের চোখের পর্দা পুরু হয়ে গেছে। অনেক কিছুই আমরা সহজাত ভাবেই মেনে নেই। “আরে, এ দেশে আর কি ই বা হবে”, “এটাই তো হওয়ার ছিল” ইত্যাদি। এই মেনে নেওয়া বা দেখে না দেখার ভান করা বৃহৎ অর্থে আবার এই অপরাধ ও দূর্নীতিগুলাকেই প্রশ্রয় দেয়, বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। এই জন্যই লঞ্চডুবির পর আমাদের সান্ত্বনা শুনতে হয়, “আল্লাহর মাল আল্লাহই নিয়ে গেছে”। অথচ এই তরুণরাই আমাদের দেখিয়ে দিল সবকিছু মেনে নেওয়া যাবে না। ২ জনের মৃত্যুসংবাদ শুনে হাসতে থাকা শাজাহানের হাসির দাতভাঙ্গা জবাব এই বিস্ময়কর আন্দোলন, যেই হাসির অর্থ হল, জনগন মরুক বাচুক আমার কিছু যায় আসে না।
অস্বাস্থ্যকর, অসভ্য রাজনীতির কারণে এই দেশে ‘আন্দোলন’ কথাটাও অনেকটা গুরুত্ব হারিয়েছে। এক দলের স্বার্থের জন্য অন্য দলের বিরুদ্ধে সকাল, বিকাল, ঈদের পর আন্দোলন প্রতিনিয়ত ঘটনা। যেহেতু সুস্থ আন্দোলন বিরল, এবং আন্দোলন কেবলই সচরাচর দেখা যায় পলিটিকাল গেইন এর জন্য, তাই এই আন্দোলন গুলা দমন করতেও ব্যবহার করা হত অমানবিক ও পাশবিক পন্থা। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের গুণ্ডারাই যার সিংহভাগ সম্পাদন করত। মোদ্দা কথা আন্দোলন ব্যাপারটার সাথেই একটা নেতিবাচক ‘স্টিগমা’ জড়িত। অর্থাৎ আন্দোলন করা মানেই মার খাওয়া, কেস খাওয়া, হুমকি খাওয়া ইত্যাদি। যার ফলস্বরুপ আমরা হয়ে উঠেছি ভীতু এক জাতি। এই অবস্থা থেকে আমাদের অনেকটা বের করে এনেছে তরুণ-কিশোরদের এই অভিনব প্রতিবাদ। চিন্তা করে দেখুন, বাবা মা ছেলেমেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে। একটা স্বুস্থ প্রতিবাদে সামিল হয়ার সৎসাহস ফিরিয়ে দিল তরুনেরা। অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে রাস্তায় নেমে আস্তে হয় আমরা যেন ভুলেই গেছিলাম!
যে সাহস নিয়ে তরুনরা কাজগুলা করছে তা সর্বোচ্চ প্রশংসনীয়। ওদের মত শিরদাঁড়া আমার আপনার কারও নাই। পুলিশের লাঠি, গুন্ডার চোখরাঙানী এবং কতিপয় শিক্ষকের(!) থ্রেট উপেক্ষা করে, রোদ বৃষ্টির বালাই না করেই তারা প্রতিবাদ করেই যাচ্ছে। নিজেরাই ট্রাফিক একদম লাইনে নিয়ে আসছে, রাস্তা পরিষ্কার করছে এবং কোথাও কোথাও রাস্তা মেরামতও করছে। এই অদম্য স্পৃহা সত্যিই সাহস জোগায়, বিশ্বাস জোগায়, পরিবর্তন সম্ভব।
পুরা আন্দোলন জুড়ে দেখা গেল অভিনব কিছু দৃশ্য, যা বাঙ্গালী হয়ে আমরা এই দেশে দেখতে পাবো কখনও আশা করিনি। এক কিশোর রাস্তায় পা বিছিয়ে বসে আছে, যাতে রিক্সাগুলা সিঙ্গেল লাইনে যায়, হয় সিঙ্গেল লাইনে যাবে, অথবা অর পায়ের ওপর দিয়ে। ছেলেমেয়ে আন্দোলন করছে আর অভিভাবক রা পাশে বসে আছে, তারাও স্লোগান দিচ্ছে, গামলা ভর্তি খিচুড়ি রান্না করে এনে এক মা নিজ হাতে তাঁর ছেলে ও ছেলের বন্ধুদের খাইয়ে দিচ্ছে, যারা কিনা আন্দোলনে ব্যস্ত। দিনভর আন্দোলনের পর রাতে যখন কিশোররা চলে যাচ্ছে, তখনও, রাতের বেলা কী সুন্দর ট্রাফিক আইন মেনে যানবাহন চলছে! এক পুলিশ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী চালানোর অপরাধে আরেক পুলিশকে মামলা দিচ্ছে, সার্জেন্ট নিজের নামেই মামলা দিচ্ছে, এ এক অভিনব দৃশ্য!
অর্থাৎ নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলনে নেমে এই বাচ্চাকাচ্চা গুলো রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে! দাবি আদায় হওয়া, আন্দোলন সফল হওয়া কিংবা অপরাধীর শাস্তি হওয়াটা বিপ্লব না, আসল বিপ্লবটা হল প্রতিনিয়ত আরাম আয়েশ ও কনভিনিয়েন্সের লেন্স ছেড়ে দিয়ে বীভৎস বাস্তবতা টা কে দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারা! অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে চিৎকার করে স্লোগানে স্লোগানে শোষকের রক্ত ঠান্ডা করে দিতে হবে এইটা শেখাতে পারা! বিপ্লব মানে নতুনভাবে ভাবতে শেখানো। শুধু তাই নয়, গত কয়েকদিনে আমাদের আরো কয়েক জোড়া বাড়তি চোখ ও গজিয়েছে। আন্দোলনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব নিকাশ বুঝি না, তবে এই আন্দোলন যে একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে তা অস্বীকার করা যাবে না। সেই অর্থে এই আন্দোলন একেবারেই সফল। চিন্তা করা যায়, একটা শহরকে রীতিমত পরিবর্তন করে ফেলেছে ইউনিফর্ম পরা, ব্যাগ ঘাড়ে নেওয়া একদল ছেলেমেয়ে! অবিস্মরনীয়!
সারাটা জীবন সমাজের বুড়াদের কাছে শুনে আসলাম ‘এখনকার’ ছেলেমেদের যত্তসব দোষত্রুটি গুলা। উনারা আমার জেনারেশন নিয়েই কত কথা বলেছে, আমার পরবর্তি জেনারেশন তো কোন ছাড়। আমার সবসময় উনাদের বলতে ইচ্ছা করত, জী জনাব আমাদের জেনারেশন শুধু কঙ্কাল আলা গেঞ্জিই পরে, কিন্তু এই যে এতদিন ধরে গদিতে বসে বসে আপনার জেনারেশন যে দেশটাকে বেঁচে খেল (এবং এখনও খাচ্ছে) তাঁর কি? এই সব অকর্মণ্য বুড়া ভাড়দের জন্য আজীবনের মত জবাব হয়ে থাকবে এই আন্দোলনটা, দেশের নানাবিধ সমস্যায় নাক সিটকে যারা টক শোতে চলে যায়।
প্রিয় ছোট ভাই বোনেরা যারা আন্দোলনে আছ, জেনে রাখ তোমরা যা করে দেখাচ্ছ তা এক দৃষ্টান্ত বটে। তোমাদের প্রতি অশেষ ভালবাসা ও শ্রদ্ধা। তোমাদের সাহসের প্রতি সালাম। জেনে রেখ এই দেশটা তোমাদেরই, ছাত্রদের। স্বাধীনতার উত্তরাধিকার ছাত্রদেরই। নষ্ট বুড়া ভাঁড়দের নয়। সালাম-রফিকের বংশধর তোমরা। তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে প্রমান করেছ। ভয় তোমাদের নাই এটা সবাই দেখছে। তোমাদের দমাতে যাদের লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে তারা তোমাদের কেনি আঙ্গুল পর্যন্ত হতে পারবে না কয়েক জনমেও। যে শিক্ষক তোমাদের ভয় দেখাচ্ছে নানাভাবে এরা সারাজীবনেও তোমাদের কাছে সৎসাহস শিখতে পারবে না। কোন কলুষতা তোমাদের ছুতে দিয়ো না। আন্দোলনের ফলাফল যা ই হোক না কেন, তোমরা সবাই এক একটা জীবন্ত দৃষ্টান্ত, কীভাবে ঘুরে দাড়াতে হয় তার। ছাত্রদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সাহায্য করছেন যারা (অভিভাবক, কিছু পুলিশ, কিছু শিক্ষক) আপনাদের মত কিছু মানুষ আছে বলেই এখনো স্বপ্ন দেখতে ভাল লাগে।
পরিশেষে একটা কথা বলে শেষ করি। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, “Curiosity killed the cat”। অর্থাৎ কিনা অজানাকে জানার স্পৃহাই বিড়ালের(বা যে কারো) মৃত্যুর কারণ । যখনই নতুন কিছু নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে চায়, বা নতুন কিছু করতে চায়, বা নতুনভাবে ভাবতে চায়, তাদেরকে এই প্রবাদটি শোনানো হয় নিরুৎসাহিত করার জন্য। অথচ অনেকেরই যেটা জানা নাই, তা হল এই প্রবাদটির পুরোটা। পুরোটা এরকম – “curiosity killed the cat, but satisfaction brought it back”। অর্থাৎ অজানাকে জানার জন্য বিড়ালের মৃত্যু হলেও, অজানাকে জানতে পারাটা তাকে নতুন জীবন দান করে।
*আরো একটা প্রবাদ, অনেকেরই হয়ত জানা আছে – “Never tickle a sleeping dragon”
মাহাতাব ও ঈশার তৈরী ব্যানার